বীরগঞ্জ নিউজ২৪ ডেস্কঃ

নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার আগেই সংসদ বাতিল, নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা ও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ৭ দফা ও উপদফা-সংক্রান্ত দাবির খসড়া চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। এসব দাবিতে দলটি আন্দোলনেরও পরিকল্পনা করছে।

এ জন্য রাষ্ট্রক্ষমতায় গ্রহণযোগ্য ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, কোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদকে মদদ না দেওয়া এবং জঙ্গিগোষ্ঠীকে ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না দেওয়া, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারো সঙ্গে বৈরিতা নয় পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ, সশস্ত্র বাহিনীকে আরও আধুনিক কার্যকর করাসহ আন্দোলনের ১২ লক্ষ্যও স্থির করেছে।

গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে দলটির স্থায়ী কমিটির নেতারা জানান।
স্থায়ী কমিটির নেতারা আমাদের সময়কে বলেন, নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে বিএনপি কাজ করছে। এ জন্য সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন জরুরি বলে মনে করছি। এ জন্য ৭ দফা-উপদফা দাবিতে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে চায় বিএনপি। শুধু দাবির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে চাইছে না দলটি। ক্ষমতায় গেলে কী কী করা হবে, এ সংক্রান্ত ১২টি লক্ষ্যের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। চূড়ান্ত করার আগে আরও আলোচনা-পর্যালোচনা হবে বলে স্থায়ী কমিটির নেতারা জানান।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, ‘এ নিয়ে সোমবার রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সেখানে উপস্থিত নেতারা তাদের মতামত দিয়েছেন। এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির লক্ষ্যে এসব করা হচ্ছে।’
যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া যৌথভাবে তাদের দাবি ঘোষণা করেছে। সেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি তারা চাননি। বিএনপি নেতারা বলছেন, এটা কোনো সমস্যা নয়। ঘোষণার আগে এ নিয়ে তাদের সঙ্গে বিএনপির কথা হয়েছে। এখন সবার বক্তব্য হচ্ছে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন যেমন সম্ভব নয়, তেমনি শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকলে নিরাপদ বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। যেহেতু সবার সুর একই, তাই বিএনপির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট নেতাদের জানানো হয়েছে খালেদা জিয়ার মুক্তি তারা না চাইলেও জাতীয় ঐক্য গড়তে কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু বিএনপি খালেদা জিয়ার মুক্তি চাইলে যুক্তফ্রন্ট বা জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের কোনো বাধাও নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় আমাদের সময়কে বলেন, ‘যারা জাতীয় ঐক্য চান তাদের সবার সুরই এক ও অভিন্ন। এ অবস্থায় অন্য দাবির সঙ্গে রাজনৈতিক মামলায় কারাবন্দি দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি বিএনপি তো চাইতেই পারে। এতে কারো কোনো সমস্যা নেই।’
৭ দফা দাবি :
১. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই ক) জাতীয় সংসদ বাতিল, খ) দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও তার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার।
২. ক) দেশের সব বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মুক্তি, সাজা বাতিল ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, খ). নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের ফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও নতুন কোনো মামলা না দেওয়ার নিশ্চয়তা, গ) পুরনো মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার না করা, ঘ) কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সাংবাদিকদের আন্দোলন এবং সামাজিক গণমাধ্যমে স্বাধীন মতপ্রকাশের অভিযোগে ছাত্রছাত্রী, সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির নিশ্চয়তা।
৩. সরকারের পদত্যাগ ও সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা।
৪. সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনাক্রমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা।
৫. নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত এবং সম্পূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে তাদের ওপর কোনো ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ না করা।
৬. সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্র্রেসি ক্ষমতাসহ সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগ নিশ্চিত করা।
৭. নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার বিধান নিশ্চিত করা।
১২ লক্ষ্য :
১. রাষ্ট্রের সর্বস্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করা।
২. সব প্রতিহিংসার রাজনীতির অবসানে জাতীয় ঐকমত্য গঠন।
৩. রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দলীয়করণের ধারার বদলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা।
৪. রাষ্ট্রক্ষমতায় গ্রহণযোগ্য ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা।
৫. স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচারক নিয়োগ এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা নিশ্চিত করা।
৬. স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের রক্ষাকবচ দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীকে আরও আধুনিক, শক্তিশালী ও কার্যকর করা।
৭. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
৮. দুর্নীতি প্রতিরোধে দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথভাবে সংস্কার ও কার্যকর করা।
৯. সব নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা।
১০. সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারো সঙ্গে বৈরিতা নয় এ মূলনীতিকে অনুসরণ করে জাতীয় মর্যাদা এবং স্বার্থ সংরক্ষণ করে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সৎ পারস্পরিক সৎ প্রতিবেশীসুলভ বন্ধুত্ব ও সমতার ভিত্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ বিনিয়োগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
১১. কোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদকে মদদ না দেওয়া এবং কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না দেওয়া।
১২. সর্বনিম্ন আয়ের নাগরিকদের মানবিক জীবন নিশ্চিত করে, আয়ের বৈষম্যের অবসানকল্পে অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ এবং শ্রমজীবী জনগণের জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা।

Facebook Comments

You may also like

এমপি প্রার্থী নিজেই করছেন মাইকিং সঙ্গী অটো চালক!

বিশেষ সংবাদদাতাঃ  আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুড়িগ্রাম-১