শীতকালে মাছের রোগ-বালাই বেশি হয়ে থাকে। যার কারণে খামারিরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির শিকার হয়। দূষিত পানি বা পানির চেয়ে মাছ বেশি হলে উপযুক্ত খাবারের অভাব, পানির তাপমাত্রা, ক্ষারকতা বা অমস্নত্বের অত্যধিক হ্রাস বৃদ্ধি হয়, এছাড়া পরজীবী ও জীবাণুর আক্রমণে শীতকালে মাছের শরীরে রোগ দেখা দেয়।
রোগাক্রান্ত মাছের কিছু অস্বাভাবিক আচরণ ও শারীরিক অসঙ্গতি দেখা যায় যেমন- খাবারের প্রতি অনিহা, কঠিন বস্তুতে গা ঘর্ষণ, চলার গতি ধীর হওয়া; পানির উপর ভেসে থাকা; লাফালাফি করা; এছাড়াও দেহের যেকোনা অংশে ঘা হতে পারে। রূপালি রঙের সাদা ফোঁসকা উঠে পেট ফুলে যাওয়া, ফুলকা ফুলে উঠে এবং গায়ে আঠাঁলো বিজলা বের হওয়া।
আমাদের দেশে শীতকালে সাধারণত ক্ষত নামক রোগ মহামারী আকারে দেখা দেয়। উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে এসময় খমারিরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার ও চিকিৎসা: একানোমাইসিস নামের একপ্রকার ব্যকটেরিয়ার কারণে মাছের ক্ষত রোগ হয়। এ রোগের জীবাণু সম্পর্কে দ্বিমত থাকলেও প্রতিকূল পারিপার্শ্বিতা এ রোগের মূল কারণ বলে মৎস্য বিজ্ঞানীরা মনে করেন।
মাছের শরীরে ছোট ছোট লাল রঙের দাগ হওয়া; দাগগুলো বড় ক্ষতে পরিণত হওয়া; লেজ, ফুলকা ও পাখনাতে পচন ধরা; কোনো কোনো সময় ফুলকা ও পাখনা পচে গিয়ে খসে পড়া। ক্ষত রোগে আক্রান্ত মাছগুলো পানির মধ্যে কাৎ হয়ে দল ছাড়াভাবে ভাসতে থাকে এবং মাছে মাছে দুর্বলভাবে সাঁতার কাটে।
শীতকালে পুকুরের পানির পিএইচ ঠিক রাখার জন্য নিয়মিতভাবে চুন দিতে হবে; ঘন ঘন জাল ফেলে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে হবে; জাল ফেললেও মাছগুলোকে পটাশিয়াম পারমাঙ্গানেট দ্রবণে ডুবিয়ে তারপর পুনরায় পানিতে ছাড়তে হবে; পুকুরে নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে বেশি মাছ রাখা ঠিক হবে না; বর্ষার সময় বাইরের পানি পুকুরে ঢুকতে দেওয়া ঠিক হবে না; পুকুরের তলদেশের গাদ প্রতি দু’তিন বছর পর পর একবার সরিয়ে নিতে হবে; মরা মাছগুলোতে চুন লাগিয়ে পুকুর থেকে দূরে মাটির নীচে পুঁতে রাখাতে হবে।
ঘা হওয়া মাছগুলো তুত বা কপার সালফেট পরিমিত পরিমাণে তৈরি করে তাতে সামান্য সময়ে গোসল করিয়ে আবার পানিতে ছেড়ে দিতে হবে; ব্যাপকহারে এ রোগ দেখা দিলে বিঘাপ্রতি ২০০ কিলোগ্রাম লবণ দুই কিস্তিতে ভাগ করে তিন দিনের ব্যবধানে পানিতে প্রয়োগ করতে হবে; মাছের অতিরিক্ত খাবারের সঙ্গে টিরামাইসিন নামক ঔষধ (১০০ মিলিগ্রাম ঔষধ প্রতি কিলোগ্রাম খাদ্যের সঙ্গে) ভালভাবে মিশিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে; সিফেক্স প্রতি হেক্টর পানিতে ১ লিটার ঔষধ প্রয়োগ করে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। এছাড়া কাঁচা হলুদ (১০:২) অনুপাতে বিঘাপ্রতি পানিতে একসঙ্গে মিশিয়ে শীতকালীন মাসগুলোতে ব্যবহার করলে এ রোগ থেকে খামারের মাছকে ভাল রাখা যায়।
লেখক: আফতাব চৌধুরী, সিলেট
এগ্রোবাংলা ডটকম
Facebook Comments