মিজানুর রহমান মিলনের রিপোর্ট | পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে সৈয়দপুরের চিহ্নিত দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহতের ঘটনায় গা ঢাকা দিয়েছে মাদক ব্যবসায়ীরা। ফলে মাদকশূণ্য হয়ে পড়েছে সৈয়দপুর। পুলিশের মাদক বিরোধী জোড়ালো তৎপরতায় গত ২১ মে দিবাগত মধ্যরাতে বন্দুকযুদ্ধে চিহ্নিত দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হওয়ার সংবাদ গোটা উপজেলায় ছড়িয়ে পড়লে সৈয়দপুরের চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও তাদের সহযোগীরা বাড়িঘর ছেড়ে পুলিশী আতংকে আত্মগোপন করে। এমনকি তারা পরিবারের সদস্যদেরও সাথে যোগাযোগ বন্ধ করেছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানায়। এদিকে নেশা পূরণে মাদক যোগাড় করতে না পেরে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে এক রিক্সাচালক মাদকসেবী। বুধবার রাতে শহরের কাজীপাড়া এলাকার নতুন বস্তি সখিনাপাড়ায় ওই ঘটনা ঘটে।
সরেজমিনে ঘুরে সৈয়দপুরের চিহ্নিত মাদক স্পটসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। এতদিন যেখানে মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীদের আড্ডা বেশী থাকতো সেসব এলাকা একেবারেই ফাঁকা। এছাড়া শহর ও গ্রামের বিভিন্ন ঝোপ-ঝাঁড়, ফাঁকা মাঠসহ পরিত্যক্ত এলাকাগুলোতেও কাউকে দেখা যায়নি। ফলে মাদক ব্যবসায়ীরা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় মাদকশূণ্য হয়ে পড়েছে সৈয়দপুর। মাদক স্পটের আশেপাশের লোকজনের সাথে কথা বললে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এতদিন ওইসব মাদক ব্যবসায়ীদের কারণে আমরা অতিষ্ঠ ছিলাম। কোন প্রতিবাদ করেও লাভ হয়নি। কিন্তু পুলিশের মাদকবিরোধী প্রশংসনীয় কর্মকান্ডের কারণে আমরা এখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছি।
মাদক প্রবণ অন্য এলাকার বাসিন্দারা জানান, মাদক বেচাকেনা বন্ধের কারণে মাদকসেবীরা মাদক সংগ্রহের জন্য পাগলের মতো দৌঁড়ঝাপ করেছে। কিন্তু কোন লাভ হয়নি তাদের। অফিসার্স কলোনীর একজন বাসিন্দা জানান, বুধবার রাতে এক মাদকসেবী একাউন্টস অফিস মাঠ, বিমানবন্দর সড়কে মাদক সংগ্রহের জন্য ছোটাছুটি করতে থাকে। তার এমন আচরণে সন্দেহে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে সে জানায়, হেরোইন সংগ্রহের চেষ্টা করছে। কিন্তু না পাওয়ায় সে এমন আচরণ করেছে। পরে তাকে চড় থাপ্পর মেরে ওই এলাকা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।
এদিকে সৈয়দপুরে মাদকশূন্য হওয়ায় মাদক সেবন করতে পারেনি সাজিদ (২৯) নামে এক রিক্সাচালক। আর মাদক সেবন করতে না পারায় রেললাইনের উপরে মাথা দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে সে। বুধবার রাতে শহরের কাজীপাড়া এলাকার নতুন বস্তি সখিনাপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। ওই এলাকার মৃত আব্দুল মজিদের পুত্র ৩ সন্তানের জনক সাজিদের স্ত্রী রুবি (২৬) জানায়, তার স্বামী নেশায় এতই আসক্ত যে রিক্সা চালিয়ে উপার্জনের টাকা দিয়ে মাদক কিনে মাদক সেবন করে আসছে। অনেক চেষ্টা করেও তাকে এ পথ থেকে না ফেরাতে পেরে সংসার ও সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করতে বাধ্য হচ্ছে সে। মাদক সংগ্রহ করতে না পেরে বুধবার রাতে বাড়ির পাশে রেললাইনে গিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় সাজিদ। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে বাড়িতে আটক করে রাখেন।
এ ব্যাপারে সৈয়দপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার পালের সাথে কথা হলে তিনি ঘটনাটি শুনেছেন জানিয়ে বলেন, তার পরিবার চাইলে সাজিদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। তবে তিনি বলেন সৈয়দপুর থেকে মাদক নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। এতে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পুলিশের মাদক বিরোধী কর্মকান্ডকে সাধুবাদ জানিয়ে রাঘব বোয়ালদের আইনের আওতায় আনারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
সুত্র: সৈয়দপুর নিউজ
Facebook Comments