বীরগঞ্জ নিউজ২৪ ডেস্কঃ
বগুড়া সদরের পীরগাছা এ এফ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে মা সমাবেশ ও সংবর্ধনা সভায় হিন্দু শিক্ষার্থীদের গরুর মাংস দিয়ে রান্না করা তেহারি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও বগুড়া-৬ আসনের এমপি নুরুল ইসলাম ওমরের উপস্থিতিতেই শনিবার দুপুরে ওই ঘটনা ঘটে। এর জেরে রোববার সকালে এলাকার কয়েকশ’ মানুষ ওই স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষক আবদুল হান্নানের ওপর চড়াও হয়। খবর পেয়ে বগুড়া সদর উপজেলার ইউএনও এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা স্কুলে গিয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে আটক করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
বগুড়া সদর থানার ওসি এস এম বদিউজ্জামান জানিয়েছেন, এলাকাবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষক আবদুল হান্নানকে আটক করা হয়েছে। তবে এখনও মামলা হয়নি। বগুড়া সদর উপজেলার ইউএনও আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এইচ এম ইকবাল এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাফতুন আহমেদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যেখানে শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের জন্য শুকনো খাবারের প্যাকেটের আয়োজন করা হয়েছিল, সেখানে তেহারি খাওয়ানোর কোনো সুযোগই নেই। তাদের দাবি, এটি ভুল বোঝাবুঝি।
বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এইচ এম ইকবাল জানান, জাতীয় পার্টির এমপি নুরুল ইসলাম ওমরকে সম্প্রতি বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মনোনীত করায় শনিবার স্কুলের পক্ষ থেকে মা সমাবেশ এবং তাকে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে দুপুরে খাবারের আয়োজন করা হয়।
লাহিড়ীপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাফতুন আহমেদ জানান, অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, আমন্ত্রিত অতিথি ও তাদের সঙ্গে আসা গাড়িচালক, পুলিশ এবং গ্রাম পুলিশ সদস্যদের জন্য তিন ধরনের খাবারের আয়োজন করা হয়। শিক্ষার্থী ও তাদের মায়েদের জন্য ছিল জিলাপি, লাড্ডু ও নিমকির একটি করে প্যাকেট। অতিথিদের সঙ্গে আসা গাড়িচালক, পুলিশ সদস্যদের একটি করে তেহারির প্যাকেট দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে যারা হিন্দু ধর্মাবলম্বী তাদের দেওয়া হয় খাসির মাংস দিয়ে তৈরি পোলাওয়ের প্যাকেট।
তবে বগুড়া সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আশিষ কুমার রায় জানান, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ছাত্রীদের জন্য বিরিয়ানির প্যাকেট এবং অভিভাবকদের জন্য নাস্তার প্যাকেট সরবরাহ করা হয়। ওইদিন সন্ধ্যার পর জানাজানি হয়, ৪২ জন হিন্দু ছাত্রীকে তেহারির প্যাকেট দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে রাত থেকেই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
ইউএনও আজিজুর রহমান জানান, এমপি ওমরকে নিয়ে অন্য একটি সরকারি কর্মসূচিতে তিনি অংশগ্রহণ করেন। ফেরার পথে এ এফ স্কুলের অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং দুপুরের খাবার খান। হিন্দু শিক্ষার্থীদের গরুর মাংস খেতে দেওয়ার বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে জেলা প্রশাসক তাকে ঘটনাস্থলে যেতে নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে এমপি ওমর বলেন, আমি স্কুলের ওই অনুষ্ঠানে থাকা পর্যন্ত এ ধরনের কোনো অভিযোগ শুনিনি। রোববার সকালে বিষয়টি জানানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করতে বলেছি। এটা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার মতো ঘটনা। যদি প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে অবশ্যই দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।
Facebook Comments