সামনে নির্বাচন, আমরা জানি নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন দলের প্রার্থীগণ এলাকায় আসবেন এবং তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে এলাকার উন্নয়নের কথা বলবেন আর সেই সাথে সাধারণ মানুষের কাছে নিজেদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের নিজ নিজ প্রতীকের জন্যে ভোট চাইবেন। যেহেতু বিভিন্ন দলীয় প্রার্থীরা ঠিক নির্বাচনের আগেই একমাত্র সাধারণ জনগনের দ্বোর গোড়ায় আসে এবং সেই সুবাদে জন প্রতিনিধিরা অবহেলিত মানুষের কথা শোনার সুযোগ পায়। এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে কিছু কথা এই লেখার মাধ্যমে বলতে চাই। বলতে চাই দীর্ঘ দিন থেকে চলে আসা ‘ঝাড়বাড়ী-জয়গঞ্জ আত্রাই খেয়াঘাট সেতু বাস্তবায়ন কমিটি’র নেতৃত্বে একটি ন্যায্য ও অতিব প্রয়োজনীয় সামাজিক আন্দোলন আর অত্র অঞ্চলের হাজার হাজার শ্রমজীবীসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষ দিনের পর দিন একটি প্রাণের দাবির কথা।

বলতে চাচ্ছিলাম বীরগঞ্জ উপজেলার পূর্ব উত্তরে ঝাড়বাড়ি এলাকার আত্রাই ও অপার সংলগ্ন জয়গঞ্জ খেয়া খাটে একটি সেতু বাস্তবায়নের স্বপ্নের কথা। স্বপ্ন বলছি এই কারনে যে, যতদিন থেকে এই এলাকার মানুষ এই ঘাটে একটি সেতুর দাবী জানিয়ে আসছেন সেটা যদি অমূলক কোন স্বপ্নও হতো সেটাও সত্যিতে পরিণত হতো নিঃসন্দেহে কিন্তু এখানে বিধি বাম।

আন্দোলনের কারণে সেতু বাস্তবায়নের কাজ কিছুটা নড়েচরে বসেছে আপাত দৃষ্টিতে তেমনই মনে হচ্ছে কিন্তু আখেরে কাজ কতটুকু এগিয়েছে সেটা আমরা যারা এটার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছি তারা জানি। তবুও কাজ যতটুকুই এগিয়ে তার জন্যে সংশ্লিষ্টদের সাধুবাদ জানাই।

খুব অল্প কথাতেও যদি বলি এই সেতুটি আসলে কেনো প্রয়োজন তাহলেও বলতে হয়, জেলা ও থানা সদর থেকে পূর্ব উত্তরে অবস্থিত হওয়ায় এটি অবহেলিত কৃষি নির্ভর প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকা হিসেবে পরিচিত এটি। এ অঞ্চলের মানুষের প্রধান আয়ের উৎস কৃষি।

কিন্তু কৃষকরা একটি সেতুর কারণে নিজেদের আবাদের কাঁচামাল ও শস্য বা আবাদি ফসল সময় ও পরিবহন অসুবিধার কারণে যায়গা মতো প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সঠিক যায়গায় পৌঁছাতে না পারার কারণে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন। এতে সাধারণ কৃষকরা কি পরিমাণে আর্থিক লাভ থেকে বঞ্চিত হয় বা ক্ষতির সন্মুখীন হয় তার হিসেব বের করতে রকেট সাইন্স জানতে হয় না।

মাঝে মধ্যেই মুমূর্ষু রোগী হাসপাতাল যেতে যেতে মারা যাবার খবর পাওয়া যায়। ঝাড়বাড়ী থেকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পঞ্চাশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পক্ষান্তরে নিলফামারী সদর হাসপাতাল মাত্র সতেরো কিলোমিটার। আত্রাই নদীর এই অংশে একটা সেতুর অভাবে নীলফামারী সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। ফলশ্রুতিতে অনেক মুমুর্ষ রোগী উক্ত হাসপাতালের সরকারী সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

আত্রাই এর অংশে সেতু হলে ঢাকার সাথে উক্ত অঞ্চলসহ ঠাকুরগাঁ বা পঞ্চগড়ের বিভিন্ন উপজেলার দূরত্ব কমে যাবে ক্ষেত্র বিশেষে এক থেকে দেড়শত কিলোমিটার। ঢাকার সাথে যোগাযোগে দুরত্ব বেশি হওয়ায় এখানে শিল্প কল-কারখানার মতো কোন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। তাই দিন দিন প্রকট আকার ধারন করছে বেকার সমস্যা ।

শুধুমাত্র ঝাড়বাড়ীর মতো গড়ে উঠা একটি মফস্বল বাজারে রয়েছে নামকরা কিছু স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসা ও কিন্ডার গার্ডেন এর মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যেসব প্রতিষ্ঠানে নদী পার হয়ে পড়তে আসে প্রায় হাজার খানেক শিক্ষার্থী(প্রতিষ্ঠান ভেদে)। সেতু না থাকায় শিক্ষার্থীরা ভরা বর্ষার মৌসুমে যাতায়াত করতে পারে না,মাঝে মাঝে নৌকা ডুবির মতো বিপদজনক ঘটনার কারণে অবিভাবকরা তাদের সন্তানদের জন্যে রিস্ক নিতে চান না। ফলে অনেক শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হয় মান সম্পন্ন শিক্ষা থেকে আবার কখনো কখনো অনেকেই অকালে ঝড়ে পড়ছে শিক্ষার আলো থেকে।

অপর দিকে নিলফামারীতে রেলষ্টেশন থাকলেও অত্র অঞ্চলের সাধারণ মানুষ এর সুবিধা নিতে পারছে না।

সেতুটি তৈরি হলে পঞ্চগর ঠাকুরগাঁ ঝাড়বাড়ী হয়ে নীলফামারী সৈয়দপুর রংপুর ঢাকা শহরে যেতে প্রায় তিন ঘন্টা সময় বেঁচে যাবে যা আগেও বলা হয়েছে দুরত্বের মাপকাঠিতে হিসেব নিরুপণ করে ।

এই অঞ্চলের মানুষ অবহেলার শিকার হয়েছে বরাবরই।সেতুটি বাস্তবায়ন হলে এই অঞ্চল যোগাযোগ ব্যবস্থার অভুতপূর্ব বিপ্লব সাধিত হবে।নানাবিধ উন্নয়ন হবে,সেতুটি পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁ,নিলফামারী ও দিনাজপুর মাঝে দুরত্ব একেবারেই কমিয়ে দিয়ে একটি মেলবন্ধন তৈরী করবে আর্থসামাজিক ভাবে। সেতুটি তৈরি হলে অল্প সময়ের মধ্যেই  পূর্ণাঙ্গ ব্যাংক সুবিধার আওতায় আসবে এই অবহেলিত অঞ্চলটি। ব্যবসা বানিজ্যে আমূল পরিবর্তন আসবে;সাথে বাড়বে কর্মসংস্থান।

মোদ্দা কথা হচ্ছে সামাজিক বন্ধন, যোগাযোগ ব্যবস্থা,কৃষি পণ্য ক্রয়-বিক্রয়,চিকিৎসা, শিক্ষা,সংস্কৃতি,ব্যবসা বাণিজ্যসহ মানুষের অনেক মৌলিক চাহিদা পূরণ হবে সহজে।

সেতুটির প্রয়োজনীয়তার কথা ঠিকভাবে লিখতে গেলে অনেক লম্বা লেখা হয়ে যাবে পাঠক হয়তো বিরক্ত হবেন। যা না বললেই নয় সেগুলোই বলার চেষ্টা করলাম। এতক্ষণ সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা বলেছি। এখন অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে স্বাধীনতার ৪৭ বছর পার হয়ে যাচ্ছে অথচ স্বাধীনতার আগে আমরা এই এলাকার মানুষ যেখানে ছিলাম আজও আমরা সেখানেই পরে রয়েছি,যেখানে আমার বাবা-দাদারা ছিলেন। বরং আমাদের পুর্বসুরীদের থেকে শুনেছি এই ঝাড়বাড়ীতে না কি একটা পুলিশ ফাঁড়ি ছিলো যেটা এখন হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস।

এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ আমরা বরাবরই সহজ সরল স্বভাবের।আমাদের ভুলানো খুবই সহজ।শুধুমাত্র নির্বাচন আসলেই এই অঞ্চলের মানুষের কদর একটু-আধটু বাড়ে,প্রার্থীরা নানান রকম উন্নয়ন এর কথা বলেন।গত নির্বাচনেও এই সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চেয়েছিলেন অনেকেই কিন্তু সময়ের সাথে সেই প্রতিশ্রুতি তারা বেমালুম ভুলে গেছেন।

আবারো ভোট এসেছে তাই দিনাজপুর-১ তথা বীরগঞ্জ-কাহারোলের সকল দলের জনপ্রতিনিধিদের কাছে বিনিত অনুরোধ করছি এবার আর মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চাইবেন না আপনারা।এলাকার ভোট ব্যাংকের কথা মাথায় রেখে আপনারা সঠিক সিদ্ধান্তে সঠিক প্রতিশ্রুতি দেবেন বলেই আশা রাখি।

এর পর সময় পেলে ঝাড়বাড়ী-জয়গঞ্জ আত্রাই খেয়াঘাট সেতু বাস্তবায়ন কমিটির আন্দোলন অগ্রগতি নিয়ে লিখবো আবার।

লিখেছেনঃ মো:আবু বক্কর সিদ্দীক
ঝাড়বাড়ী-জয়গঞ্জ খেয়াঘাট সেতু বাস্তবায়ন কমিটির যুগ্ন আহবায়ক।

Facebook Comments

You may also like

এমপি প্রার্থী নিজেই করছেন মাইকিং সঙ্গী অটো চালক!

বিশেষ সংবাদদাতাঃ  আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুড়িগ্রাম-১